
সম্প্রতি মার্কিন গাড়ি প্ৰস্তুতকারক সংস্থা টেসলা তাদের ভারত আগমন বার্তা জারি করেছে এবং তারা 3 জন ভারতীয় ডিরেক্টরও ঘোষণা করেছে। মার্কিন ক্রোরপতি এলন মাস্কের এই যুগান্তকারী সংস্থা লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি চালিত উচ্চমানের যান করে থাকে। অনেক দিন থেকেই এই সংস্থার আবির্ভাবের গুজব সোনা যাচ্ছিল কিন্তু সরকারি ভাবে কিছুই ঘোষণা করা হয়নি। স্বভাবতই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে দেশের গুণীজন ব্যাক্তি তাদের টুইটার হ্যান্ডল থেকে এই আগমনী সংবাদে আনন্দ প্রকাশ করেছেন।
কিন্তু, এই আনন্দ কতদিন টিকে থাকে সেটাই দেখার। টেসলার আগমনের এই সময়টাও খুব গুরুত্বপূর্ণ, বিভিন্ন পরিস্হিতি বিবেচনা করে। কিছু সাধারণ অথচ অতীবও গুরুত্তপূর্ণ পয়েন্টস সকলের নজর এড়িয়ে যাচ্ছে। সেই সকল কারণই এই venture এর অঙ্কুরে বিনাশ ঘটাতে পারে।
পরিকাঠামো - ইলেকট্রিক চালিত যান এর কনসেপ্ট যেকোনো সেভাবে প্রচলিত হয়নি। শেষ 5 বছরে অনেক উন্নতি হয়েছে। ইলেকট্রিক যানের জন্য যে অনুসারী শিল্প গুলির প্রয়োজন তার অনেকগুলি গড়ে উঠেছে। টেসলার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুভিধাজনক পরিস্থিতি। লিথিয়াম-আয়ন এর সর্বকৃষ্ট খনি রয়েছে দক্ষিন আমেরিকাতে। কিন্তু সেইক্ষেত্রে লজিস্টিক্সস খরচ অনেক বেশি হয়ে যাবে। ভারতে গাড়ি তৈরি আমদানিও করা যাবে না। ভারতে আমদানিকৃত গাড়ির মূল্যের উপর ১00% হারে কর লাগে। 30 লাখের গাড়ি সেক্ষত্রে বিক্রি হবে 60 লক্ষ টাকাতে, যেটা কখনোই আশাপ্রদ নয়। এটি এক দিক দিয়ে বিদেশি কারখানা গুলিকে আরো বেশি করে ভারতে কারখানা প্রতিষ্ঠা করবে, লগ্নির ফলে নতুন কর্মসংস্থান হবে।
ব্যাটারি চালিত গাড়ির জন্য 100 কিমি অন্তর একটি করে সুপারচার্জের ব্যাবস্থা রাখে টেসলা। অন্তত গোটা উত্তর আমেরিকা জুড়েই এই ব্যাবস্থা রাখা আছে। ভারতে এটা স্বপ্ন বলেই মনে হচ্ছে।

পেট্রোল পাম্প গুলিতে এই ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে কিন্তু এর জন্য অতি শক্তিশালী ট্রান্সফরমার এর প্রয়োজন যেটি অতীব ব্যয়সাপেক্ষ, আর একটি কোম্পানির জন্য এই ব্যবস্থা দীর্ঘ সময় ধরে চালিয়ে যাওয়া কষ্টকর।
বাজার - আগেই বলেছি, EV অথবা ইলেকট্রিক যানের বাজার সবে খুলেছে। এখনোও আমাদের সব পরিচিত গাড়ি প্রস্তুতকারেকরা কিছু গাড়ি এনেছে আরও আস্তে চলেছে এই 2-3 বছরে। এই গাড়ি গুলি তুলনামূলক সস্তা, ভারতীয় বাজারের জন্য মানানসইও বটে। Tata Nexon EV এর মূল্য হলো 12-16 লাখ এর মধ্য। টেসলার বর্তমান মডেলগুলির পক্ষে এই দামের সাথে টেক্কা দিয়ে ওটা একপ্রকার অসম্ভব।
দাম - অন্য সব কিছুকে বাদ দিয়ে যেটাই সব থেকে বেশি মানুষকে অনুপ্রাণিত অথবা আশাহত করে তা হল দাম। আগেই বলেছি, টেসলার দামই তাকে আলাদা স্থানে রেখেছে। আমেরিকাতেও অধিকাংশেরও বেশি মানুষ টেসলা কেনার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও কিনতে পারেন না অতি উচ্চদামের জন্য। টেসলা 3 এর base price হলো $38,000 অথবা 30 লাখের একটু বেশি।

একটি সংখ্যা থেকেই এটা পরিষ্কার হয়ে গেল যে এই মহামূল্যের গাড়ি মধ্যবিত্ত এবং উচ্চমধৰিত্ত্বর নাগালের বাইরে। তাহলে কিনবে কারা? যারা কিনবে তাদের সংখ্যাও খুবই সীমাবদ্ধ।
যাইহোক, টেসলার জন্য এটি একটি অতি প্রতিকূল পরীক্ষা হতে চলেছে। Harley Davidson তো আগেই ব্যর্থ হয়ে ফিরে গিয়েছে। দেখা যাক, টেসলার ভারত ভাগ্য কেমন হয়!
Comments